অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী ২০ মার্চ পাইপ লাইনের মাধ্যমে পার্বতীপুর ডিপোতে ভারত থেকে আমদানিকৃত ডিজেল আসছে।
ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইন প্রকল্প কাজ ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ গত বছরের ৩০ জুন শেষ হলেও প্রকল্পটি সংশোধন করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ এগিয়ে চলছে।
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে শহরের কাছেই ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের আওতায় ৬ দশমিক ৮০ একর জমিতে রিসিপ্ট টার্মিনাল (আরটি) নির্মাণ কাজ শেষ করেছে রিসিপ্ট টার্মিনাল নির্মাণ কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স দীপন গ্যাস কোম্পানী লি:। প্রকল্পের অন্যতম প্রধান কাজ অয়েল ট্যাংকার স্থাপন। অয়েল ডিপো নির্মাণে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পাইপ লাইনার্স লিমিটেড।
অয়েল ট্যাংকের আরসিসি ভিত্তির কাজ শেষ হওয়ায় প্রধান উপকরণ ১ হাজার ৩শ’ টন স্টিলের পাত বিদেশ থেকে আমদানি হওয়ায় ৫ হাজার ৬শ’ ৯০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার ৬টি ফুয়েল ট্যাংক, অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য ৩ হাজার লিটার ধারন ক্ষমতা দুটি ওয়াটার ট্যাংক ও অগ্নিনির্বাপক ফোম রাখার জন্য ২ হাজার ৫শ লিটার ধারন ক্ষমতার দুটি ব্লাডার ট্যাংক ও অটোমোশন সিষ্টেম স্থাপনের কাজ ৮টি ট্যাংক নির্মানের কাজ চলছে।
ইতিমধ্যে পাম্প হাউজ, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বিদ্যুৎ সাব-ষ্টেশন ও ২৪টি ট্র্যান্সফর্মার স্থাপন, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ নির্মাণ, ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ, সিকিউরিটি পোষ্ট, সিকিউরিট গেট, ফায়ার এলার্ম সিস্টেম স্থাপন ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স দীপন গ্যাস কোম্পানী লি: সুত্র জানায়, পাইপলাইন নির্মাণের জন্য পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় ১৯৯ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ, ১৩৪ দশমিক ১২ একর হুকুম দখল এবং তেল সংরক্ষণের জন্য পার্বতীপুরে ৬টি ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ অংশে মোট ১৩০ কি: মি: পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। ৫টি এসভি স্টেশনের (সেকশনলাইজিং ভালভ স্টেশন) কাজও শেষ হয়েছে। প্রতিটি এসভি স্টেশনের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। প্রকল্পের পিপি থেকে জানা যায়, পূর্ব ভারতের নুমালীগড় হতে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপ লাইন রয়েছে।
শিলিগুডি মার্কেটিং টার্মিনাল হতে পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মানে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত সরকার দিচ্ছে ৩০৩ কোটি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন দিচ্ছে ২১৭ কোটি টাকা।
মেঘনা কোম্পানী সূত্র জানায়, পাইপ লাইনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিক পর্যায় বাংলাদেশ আড়াই লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করবে। ১৫ বছর মেয়াদী চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছর ডিজেল আমদানির পরিমান ৪ থেকে ৫ মেট্রিক টন করে বৃদ্ধি পাবে।
উত্তরাঞ্চলের মধ্যে দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে অয়েল হেড ডিপোতে জ্বালানী তেল রেলের ট্যাঙ্ক ওয়াগানে পরিবহন করা হয়। আমদানিকৃত, ইষ্টার্ণ লিমিটেড এবং স্থানীয় অন্যান্য উৎস হতে প্রাপ্ত জ্বালানি তেল চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনায় মজুদ করা হয়। সেখান থেকে পানি পথে দৌলতপুর ডিপো ও খুলনা পাঠানো হয়। আবার সেখান থেকে ট্যাংক ওয়াগানের মাধ্যমে পার্বতীপুরের রেল হেড ডিপোতে পাঠানো হয়।
এতে সময় লাগে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন। তাছাড়া এভাবে তেল পরিবহন করা ব্যয় বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে সরকার ভারত থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে তেল আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ভারতের নুমালীগড় হতে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপ লাইন রয়েছে। এখন শিলিগুড়ি টার্মিনাল হতে পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ভারত অংশে ৫ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ অংশে ১২৫ কিলোমিটার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা।
গত ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাইপ লাইন নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। গত বছরের ২৯ নভেম্বর কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ।
২০২০ সালের মার্চ মাসে পাইপলাইন স্থাপন কাজ শুরু হয়। ভারতের লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
পাইপলাইন চালুর পর বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ আড়াই লাখ টনের মতো ডিজেল আমদানি করবে এবং পরের বছর গুলোতে ৪ থেকে ৫ লাখ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। চুক্তির অধীনে সরবরাহ শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ভারত থেকে ডিজেল কিনবে।
Leave a Reply